স্যার ২ দিন সময় দিন , বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রণমূর্তির সামনে হাত জোড় করে আত্মসমর্পণ আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের

সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩ বিকাল ০৬:৩৫ IST
651424959128f_Screenshot_2023-09-25-22-03-14-391-edit_com.google.android.googlequicksearchbox

নিজস্ব প্রতিনিধি , কলকাতা – নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নজিরবিহীন ঘটনা। দুপুর থেকে চললো টানটান উত্তেজনা। খোদ বিচারককে অপসারণ সহ আইনমন্ত্রীকে তলব , যেন সিনেমার ক্লাইম্যাক্স দেখলো রাজ্যবাসী। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গঠিত সিবিআই সিটের প্রধান অশ্বিনী শেনভি বুধবার হাজিরা দেন কলকাতা হাইকোর্টে ৷ এরপরই শুরু হয় আসল ঘটনা।

সিটের প্রধান অশ্বিনী শেনভির বক্তব্য শোনার পর সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়কে অপসারণের নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আগামী ৪ই অক্টোবরের মধ্যে তার জায়গায় নতুন বিচারক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। 

অর্পণ চট্টপাধ্যায়ের বদলির বিজ্ঞপ্তির ফাইল নিয়ে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককেও তলব করেন বিচারপতি। তার পরেই বিকাল ৫ টা নাগাদ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রণমূর্তির সামনে হাত জোড় করে আত্মসমর্পণ আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের। সেসময় তার মুখ থেকে শুধু বেড়িয়ে এলো ‘স্যার ২ দিন সময় দিন’।

সূত্রের খবর , গত ১৯ শে সেপ্টেম্বর সিবিআই সিটের প্রধানকে আদালতে তলব করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই নির্দেশ মেনে প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে হাজিরা দিলেন সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) প্রধান অশ্বিন শেণভি। তার বক্তব্য শোনার পরেই বুধবার জোড়া নির্দেশ দিলেন উচ্চ আদালতের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। 

সিটের আধিকারিকদের ‘পুলিশি হেনস্থা’ মুখে পড়ার অভিযোগ করেন অশ্বিন শেণভি। তার কাছে বিচারপতি জানতে চান , তদন্ত করতে গিয়ে কোনও বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে কি না। তার জবাবে অশ্বিন দাবি করেন , নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি কুন্তল ঘোষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আধিকারিকদের ‘পুলিশি হেনস্থা’র মুখে পড়তে হচ্ছে। এমনকি এই মামলায় সাক্ষী হিসেবে যে চারজনের নাম দিয়েছিল, তাদেরকেও জেলে পাঠানো হয় নিম্ন আদালতের নির্দেশে। এ কথা শুনেই রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। অবিলম্বে সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়কে বদলি করার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

এদিন বিচারপতি মন্তব্য করেন, “সিবিআই জজের কোনও কারণ নেই এই আদালতের কাজে হস্তক্ষেপ করা। এটি তার এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ। শুনেছি, বিচারক অপর্ণ চট্টোপাধ্যায়ের বদলির নির্দেশ হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তার মাথায় কারও হাত রয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে। আর ওই পদটি এখন ফাঁকা রয়েছে। বিচারক চট্টোপাধ্যায় অন্তর্বর্তী দায়িত্বে রয়েছেন। তাই ওই পদটিতে ৪ অক্টোবরের মধ্যে নতুন বিচারককে বসাতে হবে। আমি নির্দেশ দিচ্ছি , বিচারক চট্টোপাধ্যায় নিয়োগ দুর্নীতির আর কোনও মামলা শুনতে পারবে না। ’’

এরপর অর্পণ চট্টোপাধ্যায় বদলি সংক্রান্ত কাগজপত্রের জন্য তলব করেন আইনমন্ত্রীকে। কাগজপত্র আইনমন্ত্রীর কাছে থাকায় আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়ের বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। এ কথা শোনার পরেই আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককেও তলব করলেন বিচারপতি। নির্দেশ দেন , বিকেল পাঁচটার মধ্যে তাকে আদালতে আসতে হবে। 

তা শুনে ৫ টার আগেই এজলাসে হাজির হন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। এদিন এজলাসে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক জানান, “স্যার ২ দিন সময় দিন। আমি ২৫ শে অগাস্ট থেকে চার দিন ভর্তি ছিলাম হাসপাতালে। তারপরে কাজে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। ৬ অক্টোবর আমাকে পর্যন্ত সময় দেওয়া হোক। ওই ফাইলে সই হয়ে যাবে।”

এর পরেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ‘ব্যাপারটা অন্যভাবে নেবেন না। আপনি আপনার হাইকোর্টে এলেন। আপনার হাঁসি মুখ দেখলাম। আগে অলিন্দে দেখা হতো। ৬ অক্টোবর পর্যন্ত ওই পদে নিয়োগের সময় বাড়ানো হল।‘

ভিডিয়ো

Kitchen accessories online