অমৃতবাজার এক্সক্লুসিভ - হিন্দু পুরাণ হল হিন্দুধর্ম সংক্রান্ত অজস্র ঐতিহ্যবাহী কথামালার একটি বৃহৎ রূপ।এই হিন্দু পুরানে দেবী,দেবতা, অসুর এবং বিভিন্ন ঋষি মুনিদের বিভিন্ন কাহিনী বর্ণিত রয়েছে। তাছাড়াও উল্লেখ আছে ৩৩ কোটি দেবতার। তবে আপনারা কি জানেন এই ৩৩ কোটি দেবতার মধ্যে অষ্ট বসুদেরও নাম উল্লেখিত রয়েছে। জেনে নেওয়া যাক তাদেরই সম্পর্কে।
সৃষ্টি - মহাভারত মতে এরা ব্রহ্মার পুত্র মনুর সন্তান।মহাভারতে এরা হলেন মানুষের ক্রোরে জন্মের দরুন উপদেবতা। এই অষ্ট বসুদের নামের ক্ষেত্রে মহাভারতের সঙ্গে রামায়ণের অমিল রয়েছে।
নাম - মহাভারতে উল্লেখিত অষ্টবসুর নামগুলি হচ্ছে অনল তথা অগ্নির প্রতিনিধিত্বকারী, অনিল তথা বায়ুর প্রতিনিধিত্বকারী, সোম তথা চন্দ্রের প্রতিনিধিত্বকারী, অহস তথা অন্তরীক্ষের প্রতিনিধিত্বকারী,ধর বা পৃথু অর্থাৎ পৃথিবীর প্রতিনিধিত্বকারী, ধ্রুব তাঁরা নক্ষত্র সমূহের প্রতিনিধিত্বকারী, প্রত্যুষ তথা উষা লগ্নের প্রতিনিধিত্বকারী, প্রভাস অর্থাৎ আকাশের প্রতিনিধিত্বকারী, পুরাণ মতে অষ্ট বসুকে আটটি দিকের দেবতা বলেও মনে করা হয়েছে।
প্রধান বসু - অষ্ট বসুদের মধ্যে নেতা স্থানীয় ছিলেন শেষত্ব বসু প্রভাস।যাকে আবার দ্যু বসু নামেও ডাকা হতো।
অষ্ট বসুদের কাহিনী - একসময় অষ্টবসুরা তাদের স্ত্রীদের নিয়ে ঋষি বশিষ্ঠের আশ্রমে ভ্রমণ করতে গিয়েছিলেন। অষ্টবসুরা ঋষি বশিষ্ঠের আশ্রমে একটি কামধেনু দেখতে পেয়েছিলেন। যার নাম ছিল নন্দিনী। যা এক কথায় কল্পতরুর সমান ছিল।আসলে কামধনু হচ্ছে আশ্চর্য ক্ষমতার সম্পন্ন এক গাভী। যা সকলের মনোবাসনা পূরণ করতে পারতো।ঋষি বশিষ্ঠ এই কাম ধনুর সাহায্যে অষ্টবসূদের আপ্যায়ন এবং সমাদর করেছিলেন। এই কামধনুকে দেখে প্রভাস পত্নীর মাথায় দুষ্ট বুদ্ধির উদয় হলো। কামধনুকে চুরি করার জন্য ব্যাপকভাবে প্রভাসকে প্ররোচিত করলেন।
এরপর অষ্টবসু মিলে গাভিটি চুরি করলেন। এরপর কামধেনু চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় অষ্টবসু তাদের স্ত্রীসহ হাতেনাতে ঋষির কাছে ধরা পড়ে যান। ক্রুদ্ধ হয়ে ঋষি তাদের অভিশাপ দিলেন তারা প্রত্যেকেই মর্ত লোকে জন্মগ্রহণ করবে। পরে ঋষি প্রভাস ব্যতীত সকলের শাস্তি কমিয়ে দেন।তিনি সকলকেই আশ্বস্ত করলেন যে প্রভাস ব্যতীত সকলেই জন্মের কয়েক মুহূর্ত পরেই স্বর্গে ফিরে যেতে পারবেন।
তবে প্রভাসকে মর্তে দীর্ঘ জীবন ব্যতীত করতে হবে। এরপর অষ্ট বসুরা তখন উদ্ধারের জন্য দেবী গঙ্গার তপস্যের মগ্ন হলেন।তপস্যায় তুষ্ট হয়ে গঙ্গা তাদের আশ্বস্ত করলেন যে তাদের জন্ম দিয়েই জলে ভাসিয়ে দেবেন। তবে গঙ্গা বললেন অন্তত তাদের একটি পুত্রকে জীবিত থাকতে হবে। তা না হলে রাজা শান্তনু এবং দেবী গঙ্গার প্রণয় ও বিবাহ নিষ্ফল হয়ে যাবে।
গঙ্গা এরপর মর্তলোকের গমন করেন এবং শান্তনু সঙ্গে বিবাহ করেন। বিবাহের শর্ত ছিল যদি রাজা তার পরিচয় জানতে না চান এবং তার কাজে বাধা না দেন তবেই সে তবেই গঙ্গা তাকে বিবাহ করবেন। বিবাহের পরেও কোন কাজে গঙ্গাকে বাধা দিলে তিনি সান্তানুকে ত্যাগ করবেন। পিতার উপদেশ স্মরণ করে বিবাহে রাজি হয়ে যান শান্তনু।
জলে বসুদের বিসর্জন - কলক্রমে একে একে আটটি সন্তান জন্ম নেয় এবং জন্মের পরেই এদের সাতজনকে জলে নিক্ষেপ করলেন গঙ্গা দেবী। তবে অষ্টম সন্তানের সময় শান্তনু গঙ্গাকে বাধা দিয়ে দেন এরপরেই গঙ্গা দেবী তাকে ত্যাগ করেন এবং প্রভাসের স্বর্গে ফেরা ব্যাহত হয়।
এই বসুই মর্ত লোকে দেবব্রত তথা ভীষ্ম নামে পরিচিতি লাভ করে।