তাপস কুমার দত্ত : নদিয়া জেলার মাজদিয়া রেল স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র দ্বারা নির্মিত মন্দিরগুলি আজও ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে । ইতিহাস থেকে জানা যায় যখন বাংলাদেশে বর্গীদের আক্রমন শুরু হলো তখন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র একটি নিরাপদ আশ্রয় সন্ধান করছিলেন। সেই সময়ে রাজা কৃষ্ণনগর থেকে রাজধানী এই স্থানে স্থানান্তরিত করেন । এখানেই রাজা মন্দির ও রাজপ্রাসাদ নির্মান করেছিলেন এবং শিবের নামে এই জায়গার নামকরন করেছিলেন শিবনিবাস । এখানে রাজা যে মন্দির গুলি নির্মান করেছিলেন তাদের মধ্যে দুটি শিব মন্দির ও রাম – সীতা মন্দির আজ অবশিষ্ঠ আছে এবং বাকী মন্দির কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে ।
এখানে যে মন্দির গুলি আছে তাদের প্রত্যেকের উচ্চতা ৬০ ফুটের মতো হবে । কথিত আছে, মহারাজা নসরত খাঁ নামে এক ডাকাতকে দমন করতে এই মাজদিয়ার এক গভীর অরণ্যের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং এই অরণ্যে এক রাত কাটিয়ে ছিলেন । ডাকাতকে দমন করে পরের দিন এখানে বয়ে যাওয়া চূর্নী নদীতে মুখ ধোয়ার কাজে ব্যস্ত ঠিক তখনই একটি রুই মাছ তার কাছে চলে আসে, এই দেখে তাঁর এক আত্মীয় বলেন রাজভোগ্য জিনিস রাজা না চাইতেই রাজার কাছে উপস্থিত হয়েছে । সেই কারনে সেই আত্মীয় বললেন রাজা যদি এখানে বসবাস করেন তবে রাজার ভালোই হবে। শুধু তাই নয় ঐ সময়ে বর্গীদের আক্রমন এতো বেড়ে গেছিলো যে তাদের হাত থেকে বাঁচার এরকমই একটা নিরাপদ জায়গা রাজা খুঁজছিলেন । তাছাড়া বর্গীরা আবার শিবের ভক্ত ছিলেন সেই কারনে হয়তো তিনি শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । এই শিবনিবাসেই রাজা এক যজ্ঞের আয়োজন করেন এবং সাধু ও সন্ন্যাসীরা এই যজ্ঞে উপস্থিত হয়েছিলেন । এক সময়ে এই শিবনিবাসকে কাশীতুল্য বলে বিবেচনা করা হতো ।
এখানে যে প্রথম মন্দিরটি আছে সেটি রাজরাজেশ্বর শিবমন্দির নামে খ্যাত । এখানকার লোকেরা এই মন্দিরকে বুড়োশিব মন্দিরও বলে থাকেন । এই মন্দিরটি উঁচু এক ভিত্তিবেদির উপর অবস্থিত এবং অষ্টকোন প্রস্থচ্ছেদের এই মন্দিরের শীর্ষদেশ ছত্রাকার । প্রবেশ দ্বারের খিলান ও অবশিষ্ট দেওয়ালে একই আকৃতির ভরাটকরা নকল খিলানগুলি ‘গথিক ‘ রীতি অনুযায়ী নির্মিত হয়েছিলো । এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা কালের সময় হলো ১৭৫৪ সাল । পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড়ো কষ্টিপাথর দ্বারা নির্মিত এই শিব লিঙ্গ । এই শিবলিঙ্গ প্রত্যেকদিন পূজিত হন। এখানকার শিবলিঙ্গটির উচ্চতা প্রায় ৯ ফুট । এই শিবের মাথায় জল , দুধ , বেলপাতা ইত্যাদি দেওয়ার জন্য সিঁড়ি করা আছে এবং এক দিক দিয়ে উঠে অপর দিক দিয়ে নামা যায় ।
এর পাশেই আর একটি শিব মন্দির আছে যার নাম হলো রাজ্ঞীশ্বর । এই শিব মন্দিরটিও উঁচু ভিত্তিবেদীর উপর প্রতিষ্ঠিত । এটি আবার বর্গাকার প্রস্থচ্ছেদের চারচালা যুক্ত মন্দির । রাজা এই দ্বিতীয় মন্দিরটি তাঁর দ্বিতীয় মহিষীর জন্য নির্মান করেছিলেন এবং এর প্রতিষ্ঠাকাল হলো ১৭৬২ সাল । এখানকার শিব মন্দিরের শিবলিঙ্গটি আগের শিবলিঙ্গের তুলনায় কিছুটা ছোটো এবং এর উচ্চতা প্রায় ৭ ফুটের মতো হবে । এখানেও শিবের মাথায় জল ঢালবার জন্য সিঁড়ি করা আছে।
এর পাশেই রাস্তার আর দিকে আছে রাম –সীতা মন্দির, এটিও উঁচু ভিত্তিবেদীর উপর প্রতিষ্ঠিত । দালান আকারের কোঠার উপর বর্গাকার শিখর আছে। দালানের প্রতিটি ছাদ সমদ্বিবাহু ট্রাপিজিয়মের আকৃতির ও গর্ভগৃহের প্রতিটি ছাদ ত্রিভুজাকার না হয়ে অনেকটা দেখতে ঘন্টার প্রস্থচ্ছেদের মতো । এই মন্দিরটির প্রতিষ্ঠাকাল হলো ১৭৬২ সাল । ১৮২৪ সালে বিসপ হেয়ার সাহেব নৌকা করে ঢাকা যাওয়ার পথে এই মন্দিরগুলি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
শিবনিবাসের পাশেই আছে চূর্নীনদী এবং এই নদীর উপরেই আছে বাঁশের সাঁকো । এই নদীর পাড়ে বসে কিছুটা সময় কাটিয়ে নেওয়া যেতে পারে । এখানকার পরিবেশ বার বার মুগ্ধ করবে।
কিভাবে যাবেন : শিয়ালদহ থেকে গেদে লোকাল ধরে মাজদিয়া স্টেশনে নেমে অটো করে চূর্নী নদীর ঘাটে এসে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে শিবনিবাসে পৌঁছানো যায় । এছাড়া মাজদিয়া স্টেশনের আগে তারকনগর হল্ট স্টেশন আছে, এখানেও নেমে অটো বা টোটো করে অতি সহজেই এই শিবনিবিসে পৌঁছানো যায়। এই ২/৩ কিলোমিটার পথ অটো বা টোটোতে মিনিট দশেক সময় লাগে।
এখানে রাতে থাকার সেরকম কোনো ব্যবস্থা নেই বলে দিনের দিনে ঘুরে ফিরে আসলেই ভালো হয়।
এই স্থানে পড়ে ছিল দেবী সতীর স্তনযুগল
তিনি দেবতা হিসেবে সেরকম গুরুত্ব না পেলেও সবচেয়ে জনপ্রিয় কাহিনী হলো হারকিউলিসের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ কাহিনী
এটি বিশ্বের বৃহত্তম শিব লিঙ্গের মধ্যে একটি, যার উচ্চতা প্রায় ১২৬ ফুট
কি কারণে গির্জাটিকে স্থানান্তরিত করা হয়, দেখে নিন তার ইতিহাস
রহস্যপ্রেমী জন্য বিশেষ ঠিকানা ও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হলো এই স্থান
প্রায় ৪৯৫ বছর আগে নির্মিত হয়েছিল
মন্দিরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এবং শিমলার প্রধান শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত
এই মঠটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত
এটি ১৬৭২ সালে লাদাখি রাজা সেঙ্গে নামগিয়ালের দ্বারা পুনরায় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল
এটি শিলং শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি
এটি ১৭৫২ সালে নির্মাণ করা হয়েছে
রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পেটে অবশ্যই ঘুরে আসুন এখানে
অনেকেই মনে করেন যে এই মন্দিরেই স্বয়ং ভগবান শিবের বাস