অমৃতবাজার এক্সক্লুসিভ, সারমিন সুলতানা মন্ডল - নীরজা ভানোট, এই নামটির সঙ্গে আমরা অনকেই হয়তো পরিচিত। সাহসিকতার অপর নাম হলো নীরজা। তিনি একজন সফল নারীর হওয়ার পাশাপশি দেশের হিরো ছিলেন। যিনি দেশের কোনো সৈনিক না হওয়ার সত্বেও দেশের জন্য নিজের কর্তব্য পালন করেছিলেন। এমনকি নিজের দেশের জন্য প্রাণও দিয়েছিলেন নীরজা । দেশের প্রতিটি ব্যাক্তির তাঁর মতো নারীর সম্পর্কে জানা উচিৎ।
নীরজা ভানোট ১৯৬৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের চন্ডীগড়ের একটি পাঞ্জাবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা হরিশ ভানোট একজন সাংবাদিক ছিলেন এবং মাতা ছিলেন রামা ভানোট। প্রাথমিক জীবন দুই ভাই অখিল এবং অনীশের সঙ্গে চন্ডীগড়েই কেটেছিল তাঁর। ছোটবেলা থেকেই অনেক সাহসী ছিলেন নীরজা। তাঁর পিতা এবং মাতার আদর্শেই বড়ো হয়ে ওঠা। তারা চাইতেন যে নীরজা লেখাপড়া করে নিজের জীবনে অনেক বড়ো হয়। সমাজের সামনে মাথা উচুঁ করে বাঁচার শিক্ষায় তারা দিয়েছিলেন তাদের মেয়ে নীরজাকে।
নীরজা প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেছিলে চণ্ডীগড়ের সেক্রেড হার্ট সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল থেকে। পরবর্তীকালে পরিবার যখন তৎকালীন বোম্বে শহরে চলে এসেছিলেন, তখন তিনি বোম্বে স্কটিশ স্কুলেই নিজের পরবর্তী শিক্ষা অর্জন করেছিলেন। এরপর তিনি বোম্বের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন। বোম্বেতে থাকাকালীনই মডেলিং করতেন। মডেলিংয়ের পাশাপাশি তিনি অভিনয় করতেও অনেক ভালোবাসতেন। তিনি একাধিক টিভি কমার্শিয়ালেও কাজ করেছিলেন। খুব কম সময়ে অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছিলেন তিনি।
এরপর ১৯৮৫ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে মাতা পিতার পছন্দের পাত্রের সঙ্গে বিবাহ করে মধ্যপ্রাচ্যে চলে যেতে হয়েছিল নীরজাকে। তবে এটি তাঁর বিবাহ জীবন একদম সুখের ছিলনা। বিবাহের পর থেকে ক্রমাগত পণের জন্য চাপ দেওয়া শুরু করে তাঁর স্বামী। ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গিয়ে এক সময় স্বামীকে ছেড়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন। এই সিদ্ধান্তে তাঁর পিতা ও মাতা পুরোপুরি সমর্থন হয়েছিলেন।
এরপর নীরজা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে 'প্যান অ্যাম' সংস্থায় এয়ার হোস্টেস বা বিমানবালা হওয়ার জন্য আবেদন করেন এবং কাজটি পেয়েও গিয়েছিলেন তিনি। 'প্যান অ্যাম' সঙ্গে কাজের পাশাপাশি নীরজা মডেলিংয়ের কাজও করতেন। জীবনের বাঁধা কাটিয়ে তিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে এরপর ঘটে যায় সেই ঘটনাটা। সালটা ছিল ১৯৮৬। যাত্রাটি ছিল মুম্বাই থেকে করাচি হয়ে নিউ ইয়র্কের পথে। সেইদিন অর্থাৎ ৫ সেপ্টেম্বর একই নিয়মে যাত্রী এবং ফ্লাইটের কর্মীরা সবাই প্যান অ্যাম ৭৩ ফ্লাইটে উঠে। এই একই ফ্লাইটে ছিলেন নীরজা নিজেও। এরপর বিমানটি কিছু সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা হাইজ্যাক হয়ে যায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, বিমানটি সাইপ্রাসে উড়িয়ে নিয়ে যাবে, আর সেখানে যাত্রীদের জিম্মি করে নিজেদের দলীয় কিছু সন্ত্রাসীকে জেল থেকে মুক্ত করাবে।
ফ্লাইটটি যখন করছি পৌঁছায় তখন নিরাপত্তাকর্মীর ছদ্মবেশে চার জঙ্গি করাচি থেকে বিমানে উঠে। সন্ত্রাসবাদীরা আবু নিদাল সংস্থার অংশ ছিল। সেইদিন বিমানের বাইরে গুলির আওয়াজ শুনেই, নীরজা ইন্টারকমের মাধ্যমে ‘হাইজ্যাক’ কোড পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বিমান সেবিকা শিরিন পবনের কাছে। এর সঙ্গে সঙ্গে কোডটি টাইপ করে ককপিটে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন শিরিন। পাইলটের আসনে ছিলেন ক্যাপ্টেন উইলিয়াম কিয়াঙ্কা। সহকারী পাইলট ছিলেন টেহান ডজ। ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন জন রিজওয়ে। ক্যাপ্টেন কিয়াঙ্কা মুহূর্তের মধ্যে বিমান ছিনতাই হওয়ার কোডটি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন কন্ট্রোল টাওয়ারে। এরপর যোগাযোগ করেছিলেন প্যান আমেরিকান এয়ারওয়েজের করাচি বিমানবন্দরের কর্তা ভিরাফ দারোগার সঙ্গে।
এরপর শুরু হয় সন্ত্রাসবাদীদের তান্ডব। তারা একেরপর এক মানুষকে মারতে শুরু করে ভয় তৈরি করার উদ্দেশ্যে। ওই ফ্লাইটে ১৪ টি দেশ থেকে প্রায় ৩৮০ জন যাত্রী ছিল। তাদের মধ্যে ছোট শিশু থেকে শুরু অনেক মহিলারা ছিল। চারিদিকে ছিল সন্ত্রাসের পরিবেশ, ভয়ে ছিল সবাই। এই ভয়ঙ্কর সময়ের পুরোটা জুড়েই তিনি শান্ত আর কর্মক্ষম ছিলেন। তাঁরই নির্দেশনা অনুযায়ী সবাই ককপিট থেকে বেরিয়ে যান যেন বিমানটি উড়তে না পারে।
প্রায় ১৭ ঘণ্টা ধরে বাধা পাওয়ায় গুলি চালাতে শুরু করেছিল সন্ত্রাসবাদীরা। ওই ফ্লাইটে আটকে থাকা সবাই বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে। নিজের প্রাণ বাঁচাতে সবার প্রথমে বেরিয়ে আসতে পারতেন নীরজা কিন্তু তা করেননি তিনি। এর ফলে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালানো শুরু করেছিল। নীরজা যখনই বেরিয়ে আসছিলেন তখনই সন্ত্রাসবাদীরা তাঁকে চুল ধরে টেনে নিয়ে যায়। এরপর তাঁর মাথায় বন্দুক ধরে রাখে জঙ্গিদের প্রধান কিন্তু গুলি করে না। তবে শেষ পর্যন্ত জঙ্গিদের গুলিবৃষ্টির থেকে ৩টি শিশুকে আড়াল করতে গিয়ে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয় নীরজা। সেদিন তিনটি নিষ্পাপ শিশুর প্রাণ বাঁচাতে গিয়েই নিজে গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যান নীরজা।
তাঁর এই বলিদানের জন্যই সেদিন ৩৮০ জন মানুষের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন। মাত্র ২৩ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছিলেন। তাঁর সাহসিকতার কোনো তুলনা হয়না। আজও তিনি দেশের অন্যতম রিয়েল হিরো রয়েছেন আর থাকবেনও। তাঁর এই কৃতিত্বের জন্য পরবর্তীকালে সাহসিকতার পুরস্কার হিসেবে সবচেয়ে কম বয়সে ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন 'অশোক চক্র' পুরস্কার। এছাড়াও আমেরিকার সরকার তাঁকে ফ্লাইট সেফটি ফাউন্ডেশন 'হিরোইজম অ্যাওয়ার্ড' পুরস্কার দিয়েছেন। পুরস্কার এসেছে পাকিস্তান ও কলম্বিয়া সরকারের পক্ষ থেকেও। এছাড়াও ২০০৪ সালে অসম সাহসী এই ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের নামে একটি স্ট্যাম্পও বের করে ভারতীয় ডাকবিভাগ। ২০১৬ সালে 'নীরজা' নামে তাঁর জীবনীর উপর একটি চলচ্চিত্রও প্রকাশ পেয়েছিল।
এই ভেষজ উদ্ভিদের ঘরোয়া টোটকায় বিভিন্ন রোগের নিরাময় হবে
দেখুন কেন বিখ্যাত আজকের দিনটি
২০১৪ সাল থেকে হাতে খড়ি , আগে কাকুর ডাকনাম হচ্ছে সান্টু , সুজয়কৃষ্ণকে নিয়ে দাবি শুভেন্দুর
একনজরে দেখুন রাশি অনুযায়ী কেমন কাটবে আপনার দিন
দু-পক্ষের সওয়াল জবাবের পর জামিনের আর্জি খারিজ করে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে ইডি হেফাজতের নির্দেশ আদালতের
ফের রুপোর দাম ঊর্ধ্বমুখী
আম্বানি পরিবারের ঘর আলো করে এলো এক কন্যা
ফের সোনার দাম ঊর্ধ্বমুখী
এই নিয়ে দ্বিতীয়বার পাকিস্তানের বিমান বাজেয়াপ্ত করল মালয়েশিয়ার সরকার
গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে একাধিক স্লোগান দেন খলিস্তানিরা
ইতিমধ্যেই অভিযুক্তের মৃত্যু নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ
বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, ভিনেশ ফোগটরা মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন বলে দাবি নির্যাতিতার কাকার
সান ফ্রান্সিসকোয় মোদিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন রাহুল
ইতিমধ্যেই মূল দফতর থেকে জেলার দফতরগুলিকে ডেটাবেস তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে
গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বালুরঘাট থানার এসআই সুকুমার রায়