অমৃতবাজার এক্সক্লুসিভ, সারমিন সুলতানা মন্ডল - তৎকালীন ভারতে এমন কিছু নারীরা জন্মগ্রহণ করেছেন যারা তাদের কলমের জোরে পৃথিবীকে পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তেমনই এক নারী হলেন রিজিয়া রহমান। ব্রিটিশ ভারতের জন্মগ্রহণ করলেও, উত্তরকালে বাংলাদেশী লেখিকা হিসাবেই পরিচিত তিনি। তাঁর লেখা উপন্যাস হোক বা কবিতা সবই মনকে ছুঁয়ে যায়।
রিজিয়া ১৯৩৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের কলকাতার ভবানীপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি ছিল কলকাতার কাশিপুর থানার নওবাদ গ্রামে। তাঁর পারিবারিক নাম ছিল জোনাকী। তাঁর পিতা আবুল খায়ের মোহম্মদ সিদ্দিক ছিলেন একজন চিকিৎসক এবং মাতা মরিয়াম বেগম একজন গৃহিণী। তাদের পরিবার ছিল সংস্কৃতিমনা। তাঁর বড়ো দাদা মুন্সী আবদুল খালেকের পড়াশোনার প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল। তাঁর ঘর ইংরেজি আর ফার্সি বইতে ভর্তি ছিল।
রিজিয়ার পিতা একজন চিকিৎসকে পাশাপশি ছিলেন সঙ্গীত অনুরাগী। তিনি এসরাজ ও বাঁশি বাজাতেন এবং উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শুনতেন। তার মাতা সায়গল, জগন্ময় মিত্র ও কানন বালার গান শুনতেন। তাঁর পিতার চাকরি সূত্রে তাঁদের ব্রিটিশ ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়েছে। তবে ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পর তাঁরা বাংলাদেশে চলে আসেন। সেখানে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন ফরিদপুরে। সেই সময় তিনি শখের বশে কবিতা লিখতেন। ১৯৫০ সালে তিনি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়েন তখন তাঁর লেখা গল্প টারজান সত্যযুগ পত্রিকায় ছোটদের পাতায় ছাপা হয়েছিল।
১৯৫২ সালে রিজিয়ার পিতার মৃত্যুর পর তাঁরা ঢাকার শাইনপুকুরে দাদুর বাড়িতে চলে আসেন। সেই সময় তাঁর এক মামা চাঁদপুরে চাকরি করতেন। তিনি সেখানে চলে যান এবং একটি বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন। তবে তাঁর মামার পরিবার রক্ষণশীল হওয়ার কারণে তাঁকে বোরখা পড়তে বাধ্য করা হয়। একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে বোরখায় আটকে রাস্তায় লোকের সামনে পড়ে যাওয়ায় তাঁর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৬০ সালে দীর্ঘদিন পর দৈনিক ইত্তেফাকের সাহিত্য পাতায় তাঁর লেখা গল্প ছাপা হয় এবং দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতায় তাঁর লেখা কবিতা ছাপা হয়।
১৯৬৭ সালে ইত্তেফাকের সাহিত্য পাতার সম্পাদক কামরুন নাহার লাইলির উৎসাহে রিজিয়া লাল টিলার আকাশ নামক গল্প লিখেছিলেন। পরবর্তীতে ললনা পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন। রিজিয়া রহমান সাহিত্য পত্রিকা ত্রিভুজের সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনা বোর্ডের ট্রাস্টি ও জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের কার্য পরিচালক হিসেবে। তিন বছর বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শৈশব থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় রিজিয়ার কবিতা ও গল্প ছাপা হলেও তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ অগ্নিস্বাক্ষরা ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হয়। এই গল্পগ্রন্থে লাল টিলার আকাশ গল্পটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ম্যাগাজিনে অশ্লীলতার অভিযোগে ছাপাতে নারাজ ছিল। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী সম্পাদনা বোর্ডকে রাজি করিয়ে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। পরে ললনা পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে তাঁর ঘর ভাঙ্গা ঘর ছাপা হয়, যা বই আকারে ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয়।
বস্তির মানুষের দুঃখ-দুর্দশা-ক্লেদ নিয়ে রচিত এই উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত রিজিয়ার উত্তর পুরুষ উপন্যাসে তিনি চট্টগ্রামে হার্মাদ জলদস্যুদের অত্যাচার এবং পর্তুগিজ ব্যবসায়ীদের দখলদারিত্বের চিত্র তুলে ধরেছেন। এতে চিত্রিত হয়েছে আরাকান-রাজ-সন্দ-সুধর্মার অত্যাচার, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের বীরত্ব, পর্তুগিজদের ব্যবসায়ীদের গোয়া, হুগলী, চট্টগ্রাম দখলের ইতিহাস। নিষিদ্ধ পল্লীর দেহপসারিণীদের মানবেতর দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাবলী নিয়ে লিখেছেন রক্তের অক্ষর। সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকায় দেহপসারিণীদের নিয়ে লিখিত প্রতিবেদন পড়ে তিনি এই উপন্যাস লেখার প্রেরণা পান। বং থেকে বাংলা তাঁর একটি অন্যতম উপন্যাস। বাঙালি জাতীয়তাবোধ ও বাংলা ভাষার বিবর্তন এই উপন্যাসের মূল বিষয়।
রিজিয়ার স্বামীর আরেক কর্মস্থল বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে কাজ করার সময় তিনি সাঁওতালদের জীবনচিত্র পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁদের শিকারি থেকে কৃষক ও পরে শ্রমজীবী হয়ে ওঠা, এই বদলে যাওয়া জীবন নিয়ে তিনি রচনা করেন একাল চিরকাল। ২০০৪ সালে প্রকাশিত বাঘবন্দি উপন্যাসে তিনি তুলে ধরেছেন বঞ্চনা থেকে মুক্তি আবশ্যকতা। প্রাচীন নগরীতে যাত্রা উপন্যাসে লিখেছেন ঢাকার অতীত ও বর্তমান জীবনযাপন সম্পর্কে। অভিবাসী আমি তাঁর আত্মজীবনীমূলক প্রথম বই। এতে তিনি ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তাঁর শৈশবের বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁর দ্বিতীয় আত্মজীবনীমূলক বই নদী নিরবধি ২০১১ সালে প্রকাশিত হয়। এতে তিনি তাঁর শৈশবের পাশাপাশি লেখক জীবনের বর্ণনা দিয়েছেন। এছাড়া ২০১১ সালে প্রকাশিত হয় গল্পগ্রন্থ চার দশকের গল্প। এতে ১৭টি গল্প রয়েছে, যার রচনা কাল ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১২ সাল। গল্পগুলোতে সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট রিজিয়া রহমান প্রয়াত হন। তাঁর লেখা প্রতিটি কবিতা, উপন্যাস আজও মানুষকে ভাবতে বাধ্য করে। তাঁর জীবনী আমাদের কাছে একটি দৃষ্টান্ত।
জেনে নিন মৃগী রোগের হাত থেকে বাঁচতে কোন কোন যোগাসন করবেন
একনজরে দেখুন রাশি অনুযায়ী কেমন কাটবে আপনার দিন
ফের রুপোর দাম নিম্নমুখী
ফের সোনার দাম নিম্নমুখী
যারা ক্রিকেটের অন্ধ ভক্ত, তারা সকলেই বসির চাচাকে চেনেন
ভারত – ৪
জাপান - ২
কোনোরকম ওটিপি শেয়ার না করার পরেও উধাও টাকা , ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ যুবক
বৃহস্পতিবার বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হতেই জানা গেল অক্ষর প্যাটেল নন রবিচন্দ্রন অশ্বিন বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে খেলবেন
ভারত – ০
সৌদি আরব – ২
পাকিস্তানের ৯.৫ কোটি মানুষ দরিদ্রসীমার নীচে অবস্থিত
একনজরে দেখুন কেন ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে আছে আজকের দিন
রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকলেই অভিষেককে ডেকে পাঠানো ইডির সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে , তোপ কুনালের
আরও ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে
লিপস অ্যান্ড বাউন্স মামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি নিয়ে তাদের সশরীরে সিজিও কমপ্লেক্সে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে
রাজকুমার হিরানির ডাঙ্কি ছবিতে শাহরুখ খানের সঙ্গেও দেখা যাবে তাকে