নিজস্ব প্রতিনিধি , জলপাইগুড়ি - বছরের এই সময় পাহাড় বেড়াতে যান অনেক পর্যটকই। কিন্তু গত বুধবার থেকে সিকিমে এক টানা মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে ভয়াবহ অবস্থা হয়েছে সিকিম সহ উত্তরবঙ্গের নানা জায়গায়। তিস্তা নদীর রৌদ্র মূর্তির দেখা মিলছে। হড়পা বান এসেছে তিস্তা নদীতে। এই দুর্যোগে আটকে পড়েছেন বহু পর্যটক। সিকিমে গিয়ে নিখোঁজ রায়গঞ্জের দুই ভাই-সহ ৩ জন যুবক। শুধুমাত্র পর্যটকরা নয় নিখোঁজ বহু পরিযায়ী শ্রমিকও। বুধবার বিকাল থেকে নিখোঁজ ডুয়ার্সের দুই পরিযায়ী শ্রমিক।
সূত্রের খবর , রায়গঞ্জের নিখোঁজ তিন যুবকের মধ্যে দুই যুবকের নাম স্বর্ণদ্বীপ মজুমদার, শ্রীকান্ত মজুমদার। তারা রায়গঞ্জ শহরের উকিলপাড়ার বাসিন্দা। অপর আরেক যুবকের নাম ঈশান, রাঁচির বাসিন্দা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর রায়গঞ্জ থেকে মোটর বাইক নিয়ে সিকিমের গুরুদংমার লেকের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেন তিন যুবক।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০ টা নাগাদ তাঁদের সঙ্গে কথা হয় পরিবারের। তারা সিকিমের লাচেনে একটি হোটেলে রাত্রিযাপন করেন। কিন্তু বুধবার সকাল থেকে পরিবারের সদস্যরা তাঁদের সঙ্গে কোনওভাবেই মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তারপরই টিভিতে সিকিমের বিপর্যয়ের কথা দেখে চিন্তায় রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। পুলিশ নিখোঁজদের খোঁজ চালাচ্ছে।
অন্যদিকে বানারহাটে কাঁঠালগুড়ি চা বাগানের দুই শ্রমিকের নাম পঞ্চন ওরাওঁ (৩৫) ও অজিত মুণ্ডা (৩০)। তারা চা বস্তির বাসিন্দা। তারা সিকিমের কারপানিতে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলন। মঙ্গলবার রাতে তিস্তা নদীর ধারে ক্যাম্প করে রাত্রিযাপন করেন তারা। আর বুধবার থেকেই শুরু হয় সিকিমে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি। তিস্তা নদীর বাঁধ ভেঙে এলাকার পর এলাকা ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তাতেই ভেসে যায় শ্রমিকদের ক্যাম্প। তাদের মধ্যে এখনও অবদি মাত্র একজনকে উদ্ধার করা গেছে। তবে খোঁজ নেই কাঁঠালগুলি চা বাগানের দুই যুবকের। তাদের চিন্তায় রাতভোর জেগে পরিবারের লোকজন।
পঞ্চনের বোন সরস্বতী জানিয়েছেন, “বুধবার বিকাল ৫টায় ফোন আসে আমাদের কাছে। বলল ওখানে বান এসেছে। আপনাদের পরিবারের যিনি গিয়েছেন উনি নিখোঁজ। আমাদের গ্রাম থেকে দু’জন গিয়েছিল। দু’জনেরই খোঁজ নেই। খুব চিন্তায় আছি। প্রশাসনের লোকজন এসেছিল। ওরা বলেছে, সমস্ত ব্যবস্থা করবে। চিন্তার কিছু নেই। তবে এখনও অবধি তো কোনও খবর এলো না"।
সিকিমের এই বন্যার কবলে পরে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১৪ জনের। নিখোঁজ হয়েছেন ১০২ জন। সিকিমে আটকে পরেছেন প্রায় ৩০০০- এর বেশি পর্যটক। তাদের মধ্যে প্রায় ২০০০ জন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। গোটা রাজ্যে সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত আহত হয়েছেন ২৬ জন। তিস্তার জলস্ফীতিতে তলিয়ে গিয়েছে ৪১ টি সেনার গাড়ি। বরদং অঞ্চলের ২৩ জন সেনা জওয়ান এখনও নিখোঁজ।