শুভ ও অশুভশক্তির মেলবন্ধন অর্থাৎ এই মন্দিরে চোখে পড়বে ভূত ও ভগবানের একসঙ্গে বসবাস

নভেম্বর ১৯, ২০২২ বিকাল ০৫:১১ IST
63789a939bfd1_02

অমৃতবাজার এক্সক্লুসিভ,স্নেহা কুন্ডু - হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে মৃত ব্যাক্তির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সমাপ্ত হলে, চিতাভস্মে জল দিয়ে আর পিছন ফিরে তাকাতে নেই। তখন মায়া ত্যাগ করতে হয় নিজের প্রিয়জনের প্রতি। মৃত ব্যক্তিটির আত্মা যাতে শান্তিতে পরপারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পারে। রাজস্থানের দৌসার মেহন্দিপুর বালাজি মন্দিরেও এই প্রথা আছে। মন্দির থেকে পুজো দিয়ে চলে আসার সময়ে আর পিছনে ফিরে দেখার নিয়ম নেই। পিছন ফিরে তাকালে কোনও না কোনও অতৃপ্ত আত্মা এসে গ্রাস করবে সেই ব্যক্তিকে। মেহন্দিপুর বালাজি মন্দিরই ভারতের একমাত্র ধর্মস্থল, যেখানে ভূত আর ভগবানের একত্রে সহাবস্থান দেখা যায়।


জনমুখে শোনা যায়, আগে এই জায়গায় এক ঘন জঙ্গল ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আরাবল্লী পর্বতের কোলে এই জঙ্গল ছিল মুখ আড়াল করে। আচমকাই এক স্থানীয় পুরোহিত স্বপ্নে দর্শন পান ভগবান বালাজির। বালাজি তাঁকে বলেন -আরাবল্লী পর্বতের মাঝে এক জঙ্গলে তাঁর আর প্রেত রাজের মূর্তি সমাধিস্থ রয়েছে। নির্দেশ দেন, ওই মূর্তি তুলে এনে মন্দিরে রেখে পুজো করবার।পুরোহিত প্রথমে অবশ্য ওই বিগ্রহ খুঁজে পাননি। পরে বালাজিই তাঁকে স্বপ্নে আবার দেখা দিয়ে জায়গাটা চিনিয়ে দেন। তারপর, জঙ্গল কেটে গড়ে ওঠে এই বালাজি মন্দির। বজরঙ্গবলী যাকে বলা হয় সঙ্কটমোচন এবং হনুমান চালিশা-য় বলাও আছে, ”ভূত পিশাচ নিকট নাহি আওবে/মহাবীর জব নাম শুনাওবে”।


কথিত আছে,বালাজির গর্ভগৃহ বাদ দিলে এই মন্দিরের বাকিটায় ভূতেদেরই বসবাস। এই মন্দিরে যারা পুজো দিতে যান এই কারণের জন্যই পুজো দেওয়ার পর ভক্তদের পিছনে ফিরে দেখতে বারণ করা হয়। এছাড়া, এই মন্দিরে পুজো দেওয়ার রীতিও অবাক করার মতো। এক বাক্স লাড্ডুর মধ্যে তিন দেবতাকে প্রথমে একটি করে নিবেদন করা হয়। তারপর বাকি লাড্ডু ছুঁড়ে দিতে হয় মন্দিরের আনাচে-কানাচে অশরীরীদের জন্য। এই মন্দিরের কোনও প্রসাদ বাড়িতে নিয়ে আসা যায় না। কারণ এখানকার কোনও জিনিস বাড়িতে নিয়ে গেলে সেই বাড়িতে নেমে আসবে অশুভ অপদেবতার ছায়া। মন্দিরে পুজোর উপকরণ হিসেবে কোনও ফুল নয়, কালো রঙের এক ধরনের বল দেওয়া হয়। যা কখনোই খাওয়ার যোগ্য নয়। মন্দিরের ভেতরে সব সময় জ্বলতে থাকা আগুনে এই বলের আহুতি দিতে হয় যাতে ভক্তদের উপর থেকে অশরীরী আত্মার প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়।

আপনারা প্রচন্ড গরমেও মরুরাজ্যের এই গ্রামে ঢুকলেই ঠান্ডা কনকনে হাওয়া আপনাকে কাঁপিয়ে দিয়ে যাবে। স্বাভাবিক জীবন যেন এই গ্রামের বাইরেই থমকে গিয়েছে। আর একবার এই মন্দির চত্বরে প্রবেশ করলে আপনি আধুনিক জীবনের অস্তিত্বই ভুলে যাবেন। রাত তিনটে থেকে এই মন্দিরের ঢোকার জন্য লাইন শুরু হয়ে যায়। এই মন্দিরের ভেতরে চারটি বড় হল ঘর রয়েছে। যে কোনও মন্দিরের ভেতর আপনি প্রবেশ করলে মন্ত্রোচ্চারণ, ঘণ্টাধ্বনি শুনতে পারবেন তবে এই বালাজি মন্দিরে প্রবেশ করলে আপনাকে স্বাগত জানাবে কানফাটানো তীক্ষ্ণ চিত্‍কার ও কান্না। ভূতে বিশ্বাস না করলেও এই মন্দিরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আপনার গা ছমছম করে উঠবেই।


তৃতীয় ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে গেলেই দম চাপা ভয় আপনাকে ঘিরে ধরবেই। কারণ এই ঘরে দেখতে পারবেন, বহু নারী-পুরুষ অসহায়ভাবে কাঁদছে, দেওয়ালে মাথা ঠুকছে। এমনকি অনেকে নিজেই নিজের গায়ে ফুটন্ত গরম জল ঢালছে। এই পর্যন্ত এসে বেশিরভাগই ভক্ত ভয়ের চোটে পালিয়ে যায়। বলা হয় এই ঘরে অশরীরী আত্মার কবলে থাকা ব্যাক্তিদের ওপর থেকে অশুভ শক্তির প্রভাব কাটানোর চেষ্টা চালানো হয়। পুরোহিতরা এইসব কাজকর্ম করে থাকেন। এখানে কারোর সঙ্গে কথা বলা বারণ।


মেহন্দিপুর বালাজি মন্দিরের প্রধান উপাস্য দেবতা হলেন শ্রীহনুমান। তাঁর সঙ্গেই মন্দিরে পূজা পান ভৈরব। এই দুই দেবতার সঙ্গেই মন্দিরে বিরাজ করেন প্রেত রাজ।প্রতিদিন দুপুর আড়াটায় প্রেত রাজের প্রতি কীর্তন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয় যাতে তিনি সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর ভক্তদের উপর থেকে অশরীরী আত্মার প্রভাব তুলেনেন।

কিভাবে যাবেন?
বিজ্ঞানমনস্ক ব্যাক্তিদের কাছে এই সমস্তকিছু ভুয়ো বলে মনে হয়। তবু কখনো রাজস্থান গেলে একবার ঘুরে আসতেই পারেন এই মন্দির থেকে কারণ বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। দিল্লি থেকে সড়কপথে মেহন্দিপুর বালাজি মন্দিরের দূরত্ব ২৫৫ কিলোমিটার আর জয়পুর হয়ে এলে ১০০ কিলোমিটার।

ভিডিয়ো

Kitchen accessories online