নিজস্ব প্রতিনিধি , দিল্লি - খালিস্তানি ইস্যুকে কেন্দ্র করে জি-২০ সম্মেলনের পর থেকেই ভারতের সঙ্গে কানাডার তীব্র বিবাদ দেখা দিয়েছে সেই বিবাদের পরিনতি যে কতোটা খারাপ দিকে এগোচ্ছে তা কানাডা এবং ভারতের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর নজর দিলে দেখা যাবে। ইতিমধ্যেই দু দেশের সম্পর্ক পুরোপুরি তলানিতে এসে ঠেকেছে।
এরআগে কানাডার ৪১ জন কূটনীতিবীদকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল ভারত সরকার। ভারতের সঙ্গে কানাডার বিবাদে ঘরে বাইরে বিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে ট্রুডো সরকার। একসময় যেসময় জাস্টিন ট্রুডোকে কানাডার হিরো বলে মানা হতো এখন এই সময় দাঁড়িয়ে নিজের দেশের মানুষেরই তোপের মুখে পড়েছেন ট্রুডো। "দেশের সর্বনাশকারী ব্যক্তি" হিসেবে তাকে সম্মোধন করেন তারই দেশের সাধারণ মানুষ।
সালটা ২০২৩, এর ১৮ ই জুন। কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের একটি শিখ গুরুদ্বারের বাইরে হত্যা করা হয়েছিল শিখ নেতা হারদীপ সিং নিজ্জার'কে। হত্যার নেপথে "ভারত সরকারের হাত জড়িত রয়েছে", এমনই অভিযোগ এনে গোটা বিশ্বজুড়ে এক কূটনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জস্টিন ট্রুডো। ঠিক এই সময় থেকেই শুরু হয় ভারত এবং কানাডার মধ্যেকার দ্বন্দ্ব যা এই সময় দাঁড়িয়ে বিরাট আকার ধারণ করেছে।
সম্প্রতি ভারতে আয়োজিত হয়েছিল জি - ২০ শীর্ষ সম্মেলন। এই সম্মেলনের পরেই ট্রুডো এই বিষয় নিয়ে মুখ খুলেছিলেন জি -২০ -র সভায়। তার এই মন্তব্যের পরেই কানাডা এবং ভারত উভয়ই একে অপরের দেশের দূতাবাস থেকে ঊর্ধ্বতন কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছেন। তারই সঙ্গে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর এই অভিযোগকে 'উদ্ভট' এবং 'অযৌক্তিক' বলে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ভারতের বিদেশমন্ত্রক। এরপরেই এই বিতর্কে আমেরিকার সমর্থন চেয়েছিলেন ট্রুডো। কিন্তু আমেরিকা এই প্রত্যাখ্যান উড়িয়ে দিয়েছে বলেই সূত্রের খবর। তার সঙ্গে ভারতের বিরোধিতা করার বিষয়েও আমেরিকা যথেষ্ট সতর্ক বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবে এখানেই শেষ নয়। যে দেশের প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষের খুব কাছের খুব প্রিয় এবং যিনি কিনা সাধারণ মানুষের মতোই তার দেশের মধ্যে দিয়ে ঘুরে বেড়ান , সেই কানাডার প্রধানমন্ত্রী যখন তারই দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করতে পথে নামেন , ঠিক তখনই তিনি রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সেই সব মানুষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কুশল বিনিময় করছিলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি এক ব্যক্তির সঙ্গে হ্যান্ডশেক করতে হাত বাড়িয়ে দেন।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মুখের উপর ওই ব্যক্তি বলেন,"আমি আপনার সঙ্গে হাত মেলাব না। কারণ আপনি উচ্ছিষ্ট। গোটা দেশকে উচ্ছন্নে নিয়ে গিয়েছেন আপনি।" এই ঘটনার পরেই ট্রুডোর মানসম্মানে আঘাত আসে। আন্তর্জাতিকভাবে দেশের নাগরিকরা তাকে কোন সম্মান দিতে নারাজ। এরই মধ্যে রাশিয়া গতকাল ট্রুডোকে কার্যত গাঁধা বলেও সম্মোধন করেছিলেন। যার ফলে আন্তর্জাতিকভাবে জাস্টিন ট্রুডোর জনপ্রিয়তা তলানিতে এসে ঠেকে। শুধু তাই নয় খালিস্তানি ইস্যুতে গতকালই আমেরিকার কাছে কার্যত কটু বাক্য শুনতে হয়েছে জাস্টিন ট্রুডোকে।
এর পাশাপাশি খালিস্থানিদের সমর্থন করা নিয়ে ট্রুডোর ওপর মজা ওড়ানো হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। এমনই মজা উড়িয়েছেন আমেরিকার কমেডিয়ান অ্যান্ড্রু শুলজ। তিনি ভারত এবং কানাডার বিবাদ নিয়ে কানাডা এবং ট্রুডোর ওপর হাস্যকর মন্তব্য করেন। এবং সম্প্রতি তিনি একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে সেখানে বলেন, "আমি একটি শিরোনাম দেখেছি যাতে লেখা ছিল যে পাঞ্জাবি বিচ্ছিন্নতাবাদীকে খুন করা হয়েছে। আমি বললাম ওহ না, তারা ট্রুডো পেয়েছে। তারা জাস্টিন্ডারকে খুঁজে পেয়েছে। সব শেষে কিভাবে? কিভাবে তারা জাস্টিন্ডারকে হত্যা করেছে? তারা কি ক্যামেরায় তাকে অর্থ প্রদান করেছে?ভারত কি তাকে হত্যা করতে এখানে কাউকে পাঠিয়েছে? ভাবলাম এ নিয়ে কেউ কথা বলছে না কেন? তারপর খুন হওয়া লোকটিকে দেখলাম। তার নাম...তার প্রথম নাম হরদীপ। তার শেষ নাম নিজ্জার। এই খুব কাছাকাছি। এই সমস্ত কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় বলার সময় শুলজ
এবং তার শ্রোতাকে ট্রুডোর ওপর হাসতে দেখা যায়।
একইসঙ্গে গত দুদিন আগে ভারত থেকে মোট ৪১ জন কূটনীতিবিদকে দেশছাড়ার নির্দেশ দেন ভারত সরকার। রাষ্ট্রদূতকে ভারত থেকে সরিয়ে সিঙ্গাপুর ও কুয়ালা লামপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই। যদি ১০ ই অক্টোবরের মধ্যে কানাডা তার রাষ্ট্রদূতদের সরিয়ে না নেয়, তবে তাদের কাছ থেকে কূটনৈতিক সুরক্ষা কেড়ে নেওয়া হবে বলেই জানিয়েছেন ভারত সরকার। এরপরই রাষ্ট্রদূতদের সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে ট্রুডো সরকার। কিন্তু পাশাপাশি আরও জানা যাচ্ছে যে একসঙ্গে ৪১ জন নয়, ধাপে ধাপে ভারতে থাকা কানাডিয়ান রাষ্ট্রদূতকে সরিয়ে নিয়েছেন কানাডিয়ান সরকার।
এই সকল দ্বন্দ্বের মাঝেই নয়া দিল্লি ভারত-কানাডা কূটনৈতিক সংঘাতের আবহে কানাডার নাগরিকদের জন্য ভিসা পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই। এই নিয়ে প্রথমবার ওয়াশিংটনে মুখ খুলেছিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী ড: এস জয়শঙ্কর। তার কথায়, “বাধ্যবাধকতা ছিল। আমাদের কূটনীতিক, দূতাবাসের উপরে হিংসার প্রচার করা হচ্ছিল। কী ভাবে ওরা দফতরে গিয়ে ভিসা দেওয়ার কাজ করবেন।এটা আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্ন। ভিয়েনা চুক্তির প্রশ্ন। ভিয়েনা চুক্তি অনুযায়ী আমাদের কূটনীতিক, দূতাবাসকে নিরাপত্তা দিতে হবে।’’